Header Ads Widget

 


শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

 


স্টাফ রিপোর্টারঃকম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রবিবার (৩১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


রাত ১০টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকৃবির কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জি এম মুজিবুর রহমান। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে আগামীকাল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


এদিকে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের ফেসবুকে পেজ থেকে বাকৃবি উপাচার্যের বরাত দিয়ে রাত ১০টার দিকে জানানো হয়, ‌‘রবিবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন‍্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলো। সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে হল ত‍্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলো।’ একই বিষয় রাত ১০টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুকে পেজ থেকে পোস্ট করা হয়।


অপরদিকে বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে রাত ৯টায় দিকে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর চালিয়েছেন।


এর আগে দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি পূরণ না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ দুই শতাধিক শিক্ষককে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরুদ্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। রাত পৌনে ৮টার দিকে পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বহিরাগতরা। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।


শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ শিক্ষকদের মুক্ত করার বিষয়ে রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) সৈয়দ শাহনেওয়াজ মোর্শেদ অপু। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি হাতে হামলা চালায় বহিরাগত একদল ব্যক্তি। হামলা করে জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের তালা খুলে শিক্ষকদের বের করে দেয় তারা। তবে হামলাকারীদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হঠাৎ করে দেখি ভিসি স্যারের বাসভবনের সামনের রাস্তা দিয় অনেক লোক আসছে এবং অডিটোরিয়ামের ডান পাশ থেকে অনেক চিৎকারও আসছিল। পরে দেখি, ওখানে থাকা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদেরকে মারছে। তারপর সবাই লাইব্রেরিতে আশ্রয় নিই। সেখানেও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।’


বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামানের দাবি অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা তাদের তালা ভেঙে বের করেছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পরও তারা আমাদের আটক করে রাখলো। শিক্ষক সমিতির সদস্যরা জরুরি মিটিং করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, শিক্ষকদের আটক করে রাখার ঘটনায় জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও শিক্ষা-কার্যক্রমে আমরা অংশগ্রহণ করবো না।’


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘আমি সবচেয়ে পরে বের হয়েছি। বের হয়ে দেখলাম যে কয়েকজন লোক লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তারা বহিরাগত ছিল, নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী, সেটি আমি বুঝতে পারিনি।’


আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রির’ (বিএসসি ইন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি) দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার বেলা ১১টায় একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে এ সভায় কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর পাশাপাশি পশুপালন ও ভেটেরিনারি ডিগ্রিও চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে মোট তিনটি ডিগ্রি চালু রাখার সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

Post a Comment

0 Comments