বাবলু আকন্দঃ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, এই দেশে সবাই রাজনীতি করতে পারবেন, সবাই মত প্রকাশ করতে পারবেন, কিন্তু দেশের মালিক হল জনগণ। আল্লাহর হুকুমে এই জনগণ যাকে সমর্থন করবে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিবে।
তিনি রবিবার সন্ধ্যায় মুক্তাগাছায় ময়মনসিংহ দক্ষিন জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির শীর্ষ তিন নেতাকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তাগাছা উপজেলা ও পৌর বিএনপি স্থানীয় নন্দীবাড়ী স্টেডিয়াম মাঠে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের অংশ গ্রহনে ‘ত্রিরত্ন সংবর্ধনা’ শিরোনামে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, অনেক বছর হলো আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, বার বার আগাইলো, বার বার পিছাইলো। অবশ্য এবারের মত খারাপ অবস্থা হয় নাই কখনও। আমাদের এই দেশে সরকার প্রধান নিহত হয়েছেন, আমাদের দেশের সরকার প্রধান জেলে গেছেন, কিন্তু পলায়া গেছে এটাই প্রথম হলো। এরচেয়ে লজ্জার আর কিছু আছে! আসুন আমরা ভাবী যে, আমরা এমনভাবে রাজনীতি করবো এবং জনগণের সমথন পেলে আমরা এমনভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করবো যেন আমাদেরকে কোন দিন এমন দুর্ভাগ্যের শিকার না হতে হয়। এদেশ থেকে যেন পালিয়ে যেতে না হয়।
অন্তরবর্তী সরকারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকারে যারা ক্ষমতায় আছে তারা তো কেউ জোর করে ক্ষমতা দখল করেনি। তাদেরকে তো আমরাই ক্ষমতাই বসিয়েছি। এই দেশের ছাত্র-জনতা আমরাই তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি এবং তাদের প্রতি সমর্থন দিয়েছি। তাদেরকে অনুরোধ করে দায়িত্ব নিতে বলেছি তারা দায়িত্ব নিয়েছে। সহযোগিতা করবো বলেছি। সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তবে আমরা খুব খুশি হতাম যদি, তারা আর একটু সক্রিয় হতেন, যদি জিনিসপত্রের দামটা তারা আরেকটু কন্ট্রোল করতে পারতেন, মানুষের কষ্ট একটু কম হতো, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি যদি আরেকটু উন্নত হতো তাহলে আরো খুশি হতাম। আমরা বলছি তাদেরকে সে কথা এবং আমরা এটাও বলছি জনগণের আশাকাঙ্খা পুরনের দায়িত্ব যখন জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নেয় তখন জনগণ তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। সেজন্য নির্বাচিত সরকার শক্তিশালী হয়। এখন যে সরকার আছে সেটা অন্তরবর্তীকালীন একটা অস্থায়ী সরকার। একটা স্বৈরাচারী শাসক, একটি ফ্যাসিবাদী শাসক তারা চলে গেছে কিন্তু তাদের স্বৈরাচারী লোকজন এখনও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মধ্যে আছে। তারা নানাভাবে বিঘ্রহ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমরা যদি সবাই সচেতন না থাকি তাহলে তারা বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। আর তারা যদি বিশৃংখলা করতে পারে তাহলে আমাদের এই যে হাজার হাজার নেতাকর্মী, হাজার হাজার ভাই-বোন, শিশু জীবন দিলো সেটা ব্যর্থ হয়ে যাবে। সেটা যাতে না হয় সেজন্য আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি।যারা আমাদের জন্য আমাদের দেশের জন্য আমাদের পরিবারের জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের আশা আমাদেরকে পূরণ করতে হবে।
একটি অবৈধভাবে, অনির্বাচিত গণবিরোধী সরকারের হাতে বছরের পর বছর নিগৃহিত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া, ভুল চিকিৎসা করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি (খালেদা জিয়া) আল্লাহর ওপর, দেশের মানুষের ওপর ভরসা রেখেছেন বলে এখনও বেঁচে আছেন। যারা তাকে নির্যাতন করেছে আজ তারা অপমানের শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন, আর কখনও যেন এদেশে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র হারিয়ে না যায়, আর কখনও যেন কেউ এই দেশে স্বৈরতন্ত্র বা ফ্যাসিবাদ কায়েমের সাহস না পায়, আর কখনও যেন এই দেশে আমার সম্পদ লুটতে না পারে, চাঁদাবাজী, দুর্নীতি, লুন্ঠন করে আমাদের এই দেশটাকে সর্বশান্ত না করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে পারলেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। সেজন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল আছে, তাদের প্রত্যেক দলেরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট আছে। আওয়ামীলীগ স্বাধীন দেশে সব রাজনৈতিক দল বাতিল করে বাকশাল করেছিল। সেটা ছিল জবরদস্তি। কিন্তু বিএনপি সেটায় বিশ্বাস করে না বলেই আমার নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।
সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, আমাদের নেতা অনেক আগেই রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচী প্রস্তাব করেছেন। মেরামত কেন প্রয়োজন? কারণ বিগত সরকার দেশের সকল ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্রাচার্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশের দুইটা কিডনিই ধ্বংস করে ফেলেছে। তার একটা হলো ব্যাংকিং সেক্টর, আরেকটা হলো বিদ্যুৎ খাত।’ এখন একটা মানুষের দুটি কিডনিই যদি ধ্বংস হয়ে যায় সে মানুষ কি করে বাঁচে। আমরা বলি যে, এই সরকার (হাসিনা সরকার) এই রাষ্ট্র কাঠামোটাই বিধ্বস্ত করে ফেলেছে। নিজের স্বার্থে, ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে, লুপাটের স্বার্থে সব ধ্বংস করেছে। ভেঙ্গে-চুরে ফেলেছে অনেক কিছু সেটা মেরামত করার দরকার, সেই জন্যই ৩১ দফা।
তারেক রহমানের নামে যে মিথ্যা মামলাগুলো আছে আদালতের মাধ্যমে সেই মামলাগুলোর ফায়সালা হলে তখন তিনি দেশে ফিরবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান খান রতনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক একেএম জাহাঙ্গীর হাসানের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত নেতা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ময়মনসিংহ দক্ষিন জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির আহবায়ক আলহাজ্ব জাকির হোসেন বাবলু ও সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন। বিশেষ অতিথি ও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাবেক এমপি আবু রেজা ফজলুল হক বাবলু, ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শামীম আজাদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেনের ছেলে জুবায়ের হোসেন রানা প্রমুখ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে গণমানুষের রাজনীতি, জনকল্যাণের রাজনীতি। তিনি বলেন, আমরা তারেক রহমানের নির্দেশে গণ মানুষের রাজনীতি করবো, নতুন ধারার রাজনীতি করবো, পরিবর্তনের রাজনীতি করবো। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুসরণ নয় বরং নতুন ধারার স্বচ্ছ সুন্দর রাজনীতি করবো। তিনি বলেন, গত আওয়ামী লীগ আমলে বেগম খালেদা জিয়া সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত, নিপীড়িত। আমি মনে করি গত পনের বছরে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত নেত্রী হচ্ছেন বিএনপির চেয়ার পারসন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি গণতন্ত্রের কথা, মানুষের কথা, দেশের কথা বলেছেন বলেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা নানা মুখি নির্যাতন করে বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? বেগম খালেদা জিয়া ঠিকই আছেন কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনা গণ আন্দোলনের মুখে পালিয়ে গেছে। কোথায় পালিয়েছে, ভারতে পালিয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশ তাকে জায়গা দেয়নি। কারণ শেখ হাসিনা ছিলেন, গণতন্ত্র হত্যাকারী, মানুষ হত্যাকারী, নির্যাতনকারী। তাকে জায়গা দিয়েছে একমাত্র ভারত। কারণ গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা দেষের স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে ভারতকে নানামুখি সুবিধা দিয়েছেন। অন্তবর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
0 Comments